Header Ads

Header ADS

মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের ভূমিকা





 ১৯৭১, বাংলাদেশ ভূখন্ডের ইতিহাসেতো বটেই, বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় এ এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। মহান প্রভুর অশেষ রহমত এবং লাখো মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস আপ্রাণ প্রচেষ্টার পর পূর্ববাংলার বাঙালীরা পৃথিবীর মানচিত্রে যোগ করেছে এক টুকরো "বাংলাদেশ"। এ স্বাধীনতা অর্জনে এমন অনেক মানুষ রয়েছে, যাদের অবদানের কথা ইতিহাসে স্থান পায়নি। এদের মাঝে তৎকালীন পূর্ববাংলার আলেম সমাজ অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জনসমষ্টির একটি বিরাট অংশ ছিল আলেম সমাজ।

২৫শে মার্চ নিরাপরাধ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার মাধ্যমে পূর্ববাংলায় স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়। পরবর্তীতে নয় মাস সাধারণ মানুষকে যুদ্ধে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে আলেম সমাজের ভূমিকা অতুলনীয়। অথচ প্রচলিত ইতিহাসের পাতায় আলেম সমাজের ভূমিকা আড়ালেই রয়ে গেছে। বরং তাদেরকে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাকের হোসাইন শিবলী “আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে” গ্রন্থে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন আলেম মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় তুলে ধরেছেন।

আলেম সমাজ বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা না হলেও ২৫ শে মার্চ গণহত্যার পরপরই যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসা ও লালবাগ মাদ্রাসা সহ তৎকালীন বড় বড় মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সেক্রেটারি মুফতি মাহমুদ ২৬শে মার্চের আগে ঢাকায় এসে এ অংশের নেতাদের বলে দিয়েছিলেন,

আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলুন,দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করুন।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র অংশগ্রহণের পাশাপাশি অনেকেই পরামর্শ প্রদানের মাধমে, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে, অর্থের যোগান দিয়ে কিংবা দোয়া করার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছেন। আলেম সমাজের অনেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিরোধিতা না করে নীরব সমর্থন প্রদান করেছেন। ড. তারেক এম তওফীকুর রহমানের ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলেমসমাজ: ভূমিকা ও প্রভাব (১৯৭২-২০০১)’ শীর্ষক থিসিসে স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেম সমাজের অবদানগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। ড. তারেকের গ্রন্থ থেকে জানা যায়,পূর্বপাকিস্তানের ৯০ শতাংশ আলেম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। ১০ শতাংশ আলেম রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তারা বেশীরভাগই স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে নির্লিপ্ত অবস্থানে ছিলেন। মাত্র ৩ শতাংশ আলেম স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে এবং বিপক্ষে সক্রিয় ছিলেন। এর মাঝে ১.৬% থেকে ১.৮% আলেম মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন বা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষ নেন আর ১.২% থেকে ১.৪% আলেম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান করেন বা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষ নেন।

১৯৭১ সালে শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক, মুফতি মাহমুদ, হাফেজ্জি হুজুর সহ প্রমুখ আলেম জনসাধারণকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আলেম সমাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক আলেমদের সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছিলেন। এ আন্দোলনে অংশগ্রহণের তাগিদ প্রদান করে আল্লামা মোহাম্মদুলাহ হাফেজ্জি হুজুর রহ. বলেনঃ

‘এ যুদ্ধ ইসলাম আর কুফরের যুদ্ধ নয়, এটা হলো জালেম আর মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা জালেম, এদেশের বাঙালিরা মজলুম। তাই সামর্থ্যের আলোকে সকলকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং এটাকে প্রধান কর্তব্য বলে মনে করতে হবে।’

স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেম সমাজের ভূমিকার কারণে অসংখ্য মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে দলে দলে যুদ্ধে যোগদান করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদানের জন্য আলেম সমাজের নাম ইতিহাসের পাতায় স্থান না পেলেও বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে তারা জড়িয়ে আছেন।

 

No comments

কানাইঘাটের বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা কলেজ পূর্বের কানাইঘাট মহিলা কলেজ নামে ফিরেছে.

  কানাইঘাটের বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা কলেজ পূর্বের কানাইঘাট মহিলা কলেজ নামে ফিরেছে । এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধেয় জনাব মো: বদরুজ...

Powered by Blogger.